empty
 
 

আমেরিকার অর্থনীতি এবং আমেরিকান ডলার তেলের মূল্যের উপর প্রভাব বিস্তার করে।

আমেরিকা এবং চীনের অপরিশোধিত তেল মজুতের উপর প্রকাশনাসমূহ তেলের মূল্যেতে স্বল্পমেয়াদী প্রভাব বিস্তার করে। আমেরিকা এবং চীনে তেলের মজুদের পরিমান হ্রাস বলতে বুঝায় এই দেশদুটি এবং অন্যান্য দেশসমূহ মন্দা থেকে কাটিয়ে উঠছে। ইলেকট্রনিক ইন্ডাস্ট্রি আসোসিয়েশন (ইআইএ) অনেক পেট্রলিয়াম মজুদের কথা ঘোষনা করলে তেল উতপাদনকারীরা খুশি হয় না।

তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার আরেকটি কারন হল বিশ্ব পণ্য বাজারের বৈদেশিক বিনিময় বাজারের উপর নির্ভরশীলতা। ইউরো এবং অন্যান্য প্রধান মুদ্রাগুলোর বিপক্ষে যখন ডলারের মান কমে যায় তখন স্বর্ণের মত পেট্রলিয়ামের দাম বেড়ে যায়।

তেল উত্তোলনের পরিমান

গত দশ বছরে তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে বার্ষিক গড়ে ১.৬% হারে। তেল উত্তোলন হ্রাস পাওয়ার আলোচনা কম হয়েছে। যাহোক, এটা নিয়ে আরও ভাবতে হবে। গত কয়েক বছরে তেল উত্তোলন হ্রাস পেয়েছে আমেরিকা, নরওয়ে, মেক্সিকো, এবং গ্রেট ব্রিটেনে। এই দেশগুলো তাদের সর্বোচ্চ তেল উত্তোলনের সময় পার করেছে, তাই প্রত্যেক বছর তাদের নিম্নমুখী প্রবণতা আরও বেশি প্রবল হবে। ইতোমধ্যে, বিপি ওয়ার্ল্ড এনার্জি আউটলুক ২০০৮ এর মতে, তারা দাবি করেছে তাদের উৎপাদিত তেলের পরিমান বিশ্ব তেল উত্তোলনের ১৭% . সবচেয়ে ভয়ানক অবস্থা নরওয়ে এবং মেক্সিকোতে, যেখানে ২০০৭ সালে তেল উৎপাদনের পরিমান কমে যায় যথাক্রমে ৭.৭% এবং ৫.৫%। ২০০৯ সালে বিশ্ব তেল উৎপাদনের ১২.৬% উৎপাদনকারী রাশিয়া এই দেশগুলোর সাথে যোগ দিবে। সাইবেরিয়ার পূর্বাঞ্চলে নতুন তেল ক্ষেত্রের ভৌগলিক অনুসন্ধান প্রায় বাতিলের পথে। তেলের মজুদ অনুসন্ধান এবং উত্তোলনের কার্যকারিতা এখন প্রায় শূণ্যের কাছাকাছি। এই পরিস্থিতি চলতে থাকবে প্রতি ব্যারেলের মূল্য $৬০-৭০ না আসা পর্যন্ত।

তাই, পরের বছর পাঁচটি বড় তেল উৎপাদনকারী কোম্পানি অপরিশোধিত তেলের যোগান কমিয়ে দিবে। যদি রাশিয়া, আমেরিকা, মেক্সিকো, নরওয়ে এবং গ্রেট ব্রিটেন তেল উৎপাদনের পরিমান ১% কমিয়ে দেয়, এবং ওপেক এর উৎপাদনের পরিমান প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১২% কমিয়ে দেয় (অথবা, এমনকি ১০%), তাহলে বৈশ্বিক তেল উৎপাদনের পরিমান ৪.৫-৫% কমে যাবে (যদি অন্যান্য দেশ তেল উত্তোলনের পরিমান অপরিবর্তিত রাখে)।

এই তেল সংকটকে ১৯৭৩ সালের অয়েল এমবারগো সংকটের সাথে তুলনা করা যায়, যখন ওপেকের কিছু আরব দেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে যেসব দেশ অক্টোবরের যুদ্ধে ইসরাইলকে সমর্থন করেছিল সেসব দেশে তেল সরবারহ করার। এটা স্মরণ করা উচিত যে বৈশ্বিক তেল উৎপাদন ৪-৫% কমে যাওয়ায় ব্যারেল প্রতি দাম $৩ থেকে $৯ বৃদ্ধি পেয়েছিল। যাহোক, তখন তেল উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার কারন এবং বর্তমান সময়ের কারন ভিন্ন। ১৯৭৩ সালের তেলের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছিল, এখন এটা কমে যাচ্ছে। ১৯৭৩ সালে হ্রাস পেয়েছিল সামরিক এবং রাজনৈতিক সংকটের কারনে, এখন হচ্ছে সম্পূর্ণ যৌক্তিক অর্থনৈতিক কারনে। তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য অপেক্ষাকরা অযৌক্তিক। ১৯৭৮ সালের অয়েল এমবার্গো স্মরণ করে লাভ নাই যখন ইরানি উন্নয়ণ তেল উৎপাদনের কমিয়ে দিয়েছিল, যদিও ১৯৭৩ সালের মত নয়, এর সাথে কাকতালীয়ভাবে যোগ দিয়েছিল আমেরিকার দ্রুত শিল্প উন্নয়ন। ঐ সময়ে তেলের দাম $৪০ থেকে বেড়ে $১১০ পরিনত হয়।

চলমান সংকটের মধ্যে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তেলের যোগানের পরিমান চাহিদার বিপরীতে ক্রমবর্ধমান হারে কমে যেতে পারে। এছাড়াও, ইএইএ ঘোষণা করেছে যে ২০১১ সালে বিশ্ব শক্তি সংকটের মধ্যে পড়তে পারে অপর্যাপ্ত যোগানের কারনে। ইআইএ এর যুক্তি সরল: তেল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য $৩৬০ বিলিয়ন বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। আর্থিক সংকট এবং অপরিশোধিত তেলের দাম কম থাকার কারনে কোম্পানিগুলো বরং বিনিয়োগের পরিমান কমিয়ে দিবে, যা তেল উৎপাদনের পরিমান হঠাৎ কমিয়ে দিতে পারে। তেলের চাহিদা পুণর্বহাল হবে, তেলের উৎপাদনের পরিমান পুণর্বহাল হবে না, কারন কোম্পানিগুলো যথাযথ সময়ে বিনিয়োগ করবে না। এর ফলে যোগানের থেকে চাহিদা বেড়ে যাবে। এছাড়াও, এই ব্যপারটি বিবেচনায় আনা প্রয়োজন যে তেলের দাম এর উৎপাদন খরচের উপর নির্ভর করে। সস্তা তেলের যুগ শেষ, বছরের পর বছর তেল উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তেল উৎপাদনের গড় খরচ ব্যারেল প্রতি $৪ থেকে $৭ এর মধ্যে পড়ে তেল উত্তোলনের ঐতিহ্যবাহী অঞ্চলগুলোতে, উদাহরণস্বরুপ- রাশিয়াতে। গভীর পানির নিচ থেকে তেল উত্তোলনের খরচ পড়ে $২০-$৪০ প্রতি ব্যারেলে। এই খরচের সাথে পরিবহন খরচ এবং অন্যান্য খরচ মিলিয়ে, আমরা বুঝতে পারছি তেলের মূল্য $৬০ হলে উৎপাদনকারীরা খুশি হবে ( যা তাদেরকে ভবিষ্যতে তেল উৎপাদন বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করবে). তেলের মূল্য কম থাকলে দুর্গম অঞ্চলে তেল উৎপাদনের প্রকল্প হুমকির মুখে পড়বে।

তেলের ভবিষ্যত

২০০৯ সালে তেলের মূল্য পূর্বের ঊর্ধ্বমূখী প্রবণতায় আবার ফিরে যেতে পারে যা দেখা গিয়েছিল ১৯৯৮ সালে। অর্থাৎ তেলের মূল্য $৪০-৮০ ব্যাপ্তিতে আবার ফিরে যাবে। বছরের প্রথমার্ধে বাজার ফটকাবাজদের প্রভাবমুক্ত হতে পারবে না, তাই তেলের মূল্য ব্যারেল প্রতি $৪০-৫০ ব্যাপ্তিতে অবস্থান করতে পারে। যাহোক, তেলের মূল্য সাময়িকভাবে $২০-২৫ নেমে যেতে পারে। ২০০৯ এর দ্বিতীয়ার্ধে বাজারে তেলের সরবারহ কমে যেতে পারে। ২০০৮ সালের শরতের দুর্যোগ শেষে বিশ্ব অর্থনীতি সম্ভবত পুনুরুদ্ধার হতে শুরু করবে। সকলেই লক্ষ্য করবে যে অনেক সম্পদ আতঙ্কে বিক্রি হবে। তেল সরবারহের অপর্যাপ্ততা বছরের দ্বিতীয়ার্ধে আরও তীব্রতর হবে। তেলের দাম $৫০-৭০ ব্যাপ্তির মধ্যে ওঠানামা করতে পারে। তাই, ধারনা করা হচ্ছে ২০০৯ সালে গড় তেলের দাম $৬০ হবে। বছরের শেষে তেলের দাম $৬৫ প্রতি ব্যারেল হতে পারে। যাহোক, সকল পূর্বাভাস ভবিষ্যতের জন্য, তাই বর্তমান সময় এবং ভবিষ্যতের মধ্যে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। এটা বলা কঠিন ওবামার পরিকল্পনা কতুটুকু সফল হয়, মার্কিন ডলার কেমন স্থিতিস্থাপক হবে, অথবা নতুন আরেকটি মন্দা বিশ্বকে হতভম্ব করে দেবে কিনা। যাহোক, তেল উৎপাদনকারী অনেক দেশের সরকার তাদের পরিকল্পনাকে পুনর্বিবেচনা করছে এবং পরিকল্পিত তেলের মূল্য তাদেরকে হতাশার পূর্বাভাস দিচ্ছে।

এখন কথা বলতে পারবেন না?
আপনার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন চ্যাট.
Widget callback